মুক্তিযোদ্ধা কোটা ও তার মুল্যায়ন : বাবা ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ সন্তান হলেও ছেলে আজ দিনভিখারি!
৩০% কোটা আসলেই মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানের জন্য?
নিচের লেখাটি হুবহুব বাংলানিউজ২৪ এ ১৪ তারিখে প্রকাশিত আমার হোমপেজে শেয়ার করা আছে দেখুন
মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের ছোট ছেলে শওকত আলী পাটোয়ারীর দিন কাটছে চরম অবহেলা আর দারিদ্র্যের মধ্যে।
জীবন যুদ্ধে হেরে কখনো চায়ের দোকানের পানি টেনে, কখনোবা করাত কলে কাজ করে দিনাতিপাত করছেন তিনি। এ ছাড়া এলাকাবাসীর সহায়তায় বেঁচে আছে তার পরিবারের সদস্যরা।
বাবা ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ সন্তান হলেও ছোটছেলে শওকত আজ দিনভিখারি! কখনো খেয়ে, কখনো না খেয়ে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছেন।
কষ্টের এখানেই শেষ নয়! মানসিক ও শারীরিকভাবে অক্ষম শওকতের পরিবারে রয়েছে স্ত্রী রাবেয়া আক্তার (৩৩) ও ১০ বছরের শিশুকন্যা আমেনা আক্তার বৃষ্টি।
বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার বাগপাচড়া গ্রামে ১৯৩৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। দুই ছেলে তিন মেয়ের মধ্যে বড় ছেলে মো. বাহার ১৪ বছর আগে মারা যান।
পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে শওকত সবার ছোট। বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন যখন শহীদ হন, তখন শওকতের বয়স দুই বছর। তিন বোন ঢাকা ও চট্টগ্রামে বসবাস করলেও ৪০ বছর বয়েসী শওকত বাস করেন বাবার জীর্ণ ভিটায়।
সম্প্রতি, সুইডেন থেকে মো. আমিনুল ইসলাম নামে এক শিক্ষক শওকত আলীর স্ত্রী রাবেয়ার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন। এরপর তিনি শওকত আলী পাটোয়ারীর বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে বাংলানিউজে একটি প্রতিবেদন পাঠান।
প্রতিবেদন পাঠানোর পাশাপাশি সুইডেনপ্রবাসী বাঙালিদের শওকতের পরিবারকে সাহায্য করার জন্য উৎসাহিত করেন। প্রতিবেদনটি বাংলানিউজে প্রকাশের পর ব্যাপক সাড়া পাওয়া যায়।
আমিনুল ইসলাম আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক। বর্তমানে তিনি সুইডেনে অবস্থান করছেন।
বীরশ্রেষ্ঠের বংশধরদের অবস্থা জানতে শওকত আলীর স্ত্রী রাবেয়া আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, “১০ বছর আগে আমাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই শওকত শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ। এর মধ্যে আমাদের ঘরে মেয়ে বৃষ্টি আসে।”
তিনি বলেন, “শওকত বীরশ্রেষ্ঠের ছোটছেলে হলেও বিয়ের পর থেকে অর্ধাহারে, অনাহারে দিন কাটে। শ্বশুর দেশের একজন শ্রেষ্ঠ সন্তান, সবাই সম্মান করে। কিন্তু, বিয়ের পর থেকেই সরকারের পক্ষ থেকে বীরশ্রেষ্ঠের এক ছেলে, দুই মেয়ের জন্য যে মাসিক ভাতা আসতো, তাও তেমন একটা পাইনি।”
নিজেদের পারিবারিক অবর্ণনীয় দুর্দশার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “গত একবছর ধরে চার হাজার তিনশ ২০ টাকা করে পাই। তা দিয়ে সংসার চলে না। এই দিয়ে এখন চলছি। তবে খুব কষ্ট হচ্ছে! মেয়েও বড় হয়েছে। মনে হয় না, পড়ালেখা করাতে পারবো!”
রাবেয়া আরো বলেন, “বিয়ের পর থেকে আমার আত্মীয়-স্বজনের সাহায্য দিয়ে সংসার চলতো। কিন্তু, আত্মীয়-স্বজনরা কী সব সময় দেখে! আমার কত আশা ছিল স্বামী-সংসার নিয়ে সুখে থাকবো।”
হতাশ কণ্ঠে রাবেয়া বলেন, “মেয়েকে পড়াশুনা শিখিয়ে বড় করবো; কিছুই হলো না। মানুষের স্বামীই সব। তার (শওকত) বোনদের স্বামীরা কাজ করতে পারে। তাই, ভালো আছে। আর আমি আজকে মানুষের কাছ থেকে চেয়ে চেয়ে খাই।”
তিনি বলেন, “সুইডেন থেকে আমিনুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি দুইদিন আগে ফোন করার পর থেকে অনেক জনই ফোন করেছেন। এ নিয়ে স্বামীর পরিবারের অন্য সদস্যদের (ননদ, ননদের পরিবারের লোকজন) খুব চাপে রেখেছে।”
তিনি দুঃখ করে বলেন, “শওকত বীরশ্রেষ্ঠের সন্তান হয়েও বড় অবহেলার শিকার। কোনো উপলক্ষ ছাড়া পরিবারের অন্য সদস্যরা খোঁজও নেয় না। ৫/৬ বছর আগে নৌবাহিনী প্রধান শওকতের চিকিৎসার জন্য এক লাখ টাকা দিলেও তার কানাকড়ি আমি পাইনি। শুনেছি, বীরশ্রেষ্ঠের চার সন্তানের নামে ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুটি বাড়ি আছে। কিন্তু, আমরা কোনোদিন এর সুফল পাইনি।”
রাবেয়া আক্তার অভিযোগ করেন, “কোনো অনুষ্ঠানে শওকত বা আমাকে বীরশ্রেষ্ঠের অন্য সদস্যরা নেয় না। আমন্ত্রণ পেলে জানায় না। অথচ ননদের পরিবারের সবাই উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে মানুষ হয়েছে।”
তিনি বলেন, “তাদের অনেকেই চাকরি করে ভালো অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু, বিশেষ কোনো দিন ছাড়া আমার মেয়ে ও স্বামীর খোঁজ নেয় না তারা। আমি যেন স্বামীর অসুস্থতা ও মেয়ের লেখাপড়ার বিষয়ে কাউকে কিছু না বলি, এ জন্য সব সময় চাপে রাখে। কোনো বিষয়ে বললেও আমার ননদরা খারাপ আচরণ করে।”
রাবেয়া বলেন, “আমার শুধু একটাই চাওয়া মেয়েটাকে মানুষ করা। আর স্বামীকে সুস্থ করে তোলা। মাসে মাত্র ১০ হাজার টাকা হলে সুন্দরভাবে সংসার চলে যাবে।”
অনেকেই ফোন করে সাহায্য করার বিষয়ে তিনি বলেন, “আপনাদের প্রতিবেদন প্রকাশের পর অনেকেই সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।”
“আমার বলতেও লজ্জা লাগছে যে, বীরশ্রেষ্ঠের পরিবারের একজন সদস্যকে মানুষ সাহায্য করতে চায়। আমি আমার জন্য নয়, মেয়ে ও স্বামীর চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা চাই। টাকার অভাবে মংলা বন্দরে গিয়ে শ্বশুরের কবরটি পর্যন্ত আমরা দেখতে পারিনি’, বললেন রাবেয়া।
সরকারের উদ্দেশে রাবেয়া বলেন, “আপনারা এক বা দুই মাস সাহায্য করবেন। এতে কিছুই হবে না। আবার কয়েক মাস পরে একই অবস্থা হবে!”
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে রাবেয়া বলেন, “সরকার যদি আমার মেয়ের লেখাপড়া ও স্বামীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে খুবই উপকার হবে।”
এ জন্য তিনি সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।
এ বিষয়ে সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ড. রহিমা খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, “আমি মাত্র দুইদিন হলো এখানে যোগদান করেছি। শওকতের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে আমি সরকারের উচ্চমহলে জানাবো।”
শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের ছেলে শওকত আলী পাটোয়ারী ও তার পরিবারকে কেউ আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে চাইলে নিচের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দিতে পারেন।
মো. শওকত আলী, অগ্রণী ব্যাংক, সোনাইমুড়ী শাখা, নোয়াখালী। অ্যাকাউন্ট নং-৩৪০৭২০০৬।
এ ছাড়া ইউরোপে অবস্থানরত যারা সহযোগিতা করতে চান, তারা সুইডেন অবস্থানরত প্রফেসর মো. আমিনুল ইসলামের ফোন নম্বরে (০০৩৭২৫৮২২০৬৭১) যোগাযোগ করতে পারেন অথবা ইমেইল করতে পারেন- aminulislam80@yahoo.com
Comments
Post a Comment