মাহে রমজান : খোশ আমদেদ মাহে রমজান
রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত লাভের বাণী নিয়ে বাংলাদেশ ও বিশ্বের মুসলমানদের দুয়ারে আবারও উপস্থিত হয়েছে পবিত্র রমজান। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে ইবাদত-বন্দেগি করে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের প্রশান্তি লাভ করবে মুসলমানরা। সারা বছর জ্ঞাত-অজ্ঞাতসারে তারা যে পাপ করেছে, তা থেকে ক্ষমা পাওয়ার মোক্ষম মাস হল এ রমজান। সিয়াম সাধনার দ্বারা আÍশুদ্ধির মাধ্যমে মুসলমানরা নাজাতের পথ খুঁজবে। হাজার রজনীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ রজনী লাইলাতুল কদর রমজান মাসকে করেছে বিশেষভাবে মহিমান্বিত। এ রাতেই রাব্বুল আলামিন তাঁর প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদের (সা.) ওপর সর্বশেষ ঐশী গ্রন্থ পবিত্র কোরআন নাজিল করেছেন। কোরআনের শিক্ষা হল বিশ্বাসী মানুষকে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবনে অশেষ কল্যাণ দান করা। কৃচ্ছ্র সাধন ও আÍসংযমের এ মাসে তাই আল্লাহর প্রদর্শিত পথে চলার ওয়াদা করে মানুষ, সবরকম গুনাহ্ মাফ করে দেয়ার জন্য আকুল প্রার্থনা জানায়। এ মাসে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের কঠোর ত্যাগ, ধৈর্য, উদারতা ও সততা প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়েছেন।
পরিতাপের বিষয়, এ মাসেই দেশের একশ্রেণীর ব্যবসায়ী সততা আর ন্যায়-নীতি ভুলে অতি মুনাফা লাভের প্রতিযোগিতায় নামে। তারা রমজান মাসকে মুনাফা লোটার অবলম্বন করে ফেলে। যথেচ্ছভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়ানোর এ প্রবণতা আমাদের ব্যবসায়ীদের কৃচ্ছ্র আর আÍশুদ্ধির বিপরীতে নিয়ে গেছে যেন। রমজানে বিশেষ কিছু খাদ্যদ্রব্যের চাহিদা বেড়ে যায়। পাইকারি ব্যবসায়ী ও খুচরা দোকানিরা বাড়তি চাহিদাকে মুনাফা লোটার সুযোগ হিসেবে দেখে। অসৎ ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেও দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেয়। রমজানের শিক্ষা অনুসরণের বদলে তারা যেন আরও বেশি সুযোগসন্ধানী ও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এবারও ক্রেতাসাধারণ দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়ার দৌরাÍ্য দেখতে পাচ্ছে। সরকার দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসার প্রতিশ্র“তি দিলেও তা রক্ষিত হচ্ছে না। রমজানে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে বাজার মনিটরিং আরও জোরদার করা দরকার। ইফতারসামগ্রীর দাম যেন অস্বাভাবিকভাবে না বাড়ে, সেদিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। সর্বসাধারণের কথা বিবেচনা করে সরকারকে এ সময়ে চাল-ডাল-চিনি-ভোজ্যতেল-ছোলা-বুট
রমজানে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, তা নিয়ে জনমনে সংশয় রয়েছে। বর্তমানে লোডশেডিংয়ের মাত্রা কিছুটা হ্রাস পেলেও এ অবস্থা অব্যাহত থাকবে কি-না কে জানে! নগরজীবনের অপরিহার্য উপকরণগুলোর সংকট নিরসন জরুরি। আমরা বলব, অন্তত এ মাসে যে কোনো উপায়ে এসব সংকট সহনীয় পর্যায়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হোক। রমজানে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ বৃদ্ধিতে সরকারকে বিশেষ যতœবান হতে হবে। বিশেষ করে সেহ্রি ও ইফতারের সময় বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ যেন নিরবচ্ছিন্ন থাকে। গরিব-দুঃখীদের বিপদে তাদের সহায়তা দান রমজানেরই শিক্ষা। সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদেরও দায়িত্ব রয়েছে গরিবদের পাশে দাঁড়ানোর। মানুষ, বিশেষত প্রতিবেশীর প্রতি সামাজিক দায়িত্ব পালন প্রত্যেক ঈমানদার মুসলমানের ফরজ কাজ। রমজানে যত্রতত্র যেসব ইফতারসামগ্রী বিক্রি হয়, তার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এজন্য এ সময় ভেজালবিরোধী অভিযানের উদ্যোগ নেয়া দরকার। সারাদেশেই এরকম অভিযান পরিচালনার প্রয়োজন রয়েছে। যানজট এবং আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়াসী হতে হবে পুলিশ প্রশাসনকে। রমজানে একশ্রেণীর মানুষ সংযম ও কৃচ্ছ্র সাধনের পরিবর্তে ভোগ-বিলাসে মেতে ওঠে। সম্পদশালীদের ভেতর চলে ইফতার পার্টির প্রতিযোগিতা। ভোগ-বিলাস ও যথেচ্ছাচার ত্যাগ করে সহজ, সুন্দর ও অনাড়ম্বর জীবনাচারে অভ্যস্ত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয় পবিত্র রমজানে। এ মাস মুসলমানদের জন্য আÍিক, আধ্যাÍিক ও শারীরিক উন্নতির সুযোগ এনে দেয়। এমন এক মাসে দেশের সব মুসলমান ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী ত্যাগ ও কৃচ্ছ্র সাধনের মাধ্যমে ভ্রাতৃত্ব ও শান্তির আদর্শকে সমুন্নত রাখতে সচেষ্ট হবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা। স্বাগত মাহে রমজান।
Comments
Post a Comment