শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিটা কেমন হওয়া চাই

৩৪তম বিসিএস পরীক্ষার্থীদের প্রতি শুভেচ্ছা রইল । ২৪ মে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি)। হাতে খুব বেশি সময় নেই। শেষ সময়ে নতুন করে তেমন কিছু পড়ার নেই। এ সময়ে আগের পড়া বিষয়গুলো বারবার ঝালিয়ে নিতে পারেন। কঠিন মনে হয়, এমন বিষয়গুলোর ওপর বারবার চোখ বোলান। যেমন-গণিতের সূত্রগুলো অনেকের কাছেই দুর্বোধ্য ঠেকতে পারে। ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নগুলো অনুশীলন করলে বেশ কাজে দেবে। ইন্টারনেট বা অন্য কোনো মাধ্যমে সাধারণ জ্ঞানের সামপ্রতিক ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর আপডেট তথ্য জেনে নিতে পারেন। মডেল টেস্টও হতে পারে সহায়ক। এটি নিজেকে যাচাই করে নেওয়ার একটি সুযোগ করে দেয়।

প্রতিবছর লক্ষাধিক পরীক্ষার্থী বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেন, যা অন্য কোনো চাকরির পরীক্ষায় দেখা যায় না। কিন্তু বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়াটা সহজ নয়। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হলে চাই কঠোর পরিশ্রম, নিয়মিত অধ্যবসায় আর দেশ-দুনিয়ার চলমান সব ঘটনা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান।

বিসিএস পরীক্ষার প্রথম ধাপই হচ্ছে ১০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। গত কয়েক বছরের সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থীর ৮০-৮৫ শতাংশ বাদ পড়ে। এক ঘণ্টা সময়ের মধ্যে ১০০টি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় বলে পরীক্ষার হলে চিন্তার সুযোগ থাকে না। তাই পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়া এখানে ভালো করা সম্ভব নয়। তা ছাড়া ২৮তম বিসিএস থেকে প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.৫০ নম্বর কেটে নেওয়ার নিয়ম থাকায় না জেনে উত্তর করার কোনো সুযোগ নেই। তাই যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষার হলে যেতে হবে।

কেন বাদ পড়লো কমল আর শাহানা

স্বপ্নের প্রথমসিঁড়ি বিসিএস পরীক্ষার প্রথম ধাপ প্রিলিমিনারি থেকেই ছিটকে পড়ে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী। তুমুল এ প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে কেবল ভালো প্রস্তুতি থাকলেই চলে না। কৌশলও এ ক্ষেত্রে সমান গুরুত্বপূর্ণ। ৩৩তম বিসিএস প্রিলিতে বাদ পড়া একজন পরীক্ষার্থী কমল জানালো লাইব্রেরিতে ছোটাছুটি, নিয়ম করে পড়াশোনা- সর্বোচ্চ মানের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে একটুও ত্রুটি ছিল না। বিপদ ঘটালো সময়। পরীক্ষার হলে ঘড়ির কাঁটায় চোখ রাখতেই মাথায় হাত পড়ল, কমল অর্ধেক প্রশ্নের উত্তর করতে না করতেই যে সময়ের সিংহভাগ শেষ। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে অনেক জানা প্রশ্নের উত্তরও হয়ে গেল ভুল। বাদ পড়তে হলো প্রিলিমিনারি থেকে।

শাহানার বিষয়টা অবশ্য একটু আলাদা। প্রিলিমিনারির পরীক্ষায় বসে জানা প্রশ্নের উত্তর শেষে বাকি প্রশ্নগুলোর উত্তরের ঘর ভরাট করল কতকগুলো অনুমানের ওপর, কতকগুলো একদম না জেনেই! যদি লেগে যায়! প্রচলিত এ ধারণা তার জন্য ডেকে আনল সর্বনাশ। নেগেটিভ মার্কিংয়ের কারণে কাটা গেল অনেক নম্বর, ছিটকে পড়ল প্রতিযোগিতার প্রথম পর্ব থেকেই। এ রকম অনেক কারণেই সারা বছরের পরিশ্রম ভেস্তে যেতে পারে। এ পরীক্ষায় কৌশল গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

সতর্কতা

প্রশ্নপত্রের সঙ্গে দেওয়া হবে একটি বিশেষ উত্তরপত্র (ওএমআর ফরম)। সঠিক উত্তরটি শনাক্ত করে কালো কালির বল পয়েন্ট কলম দিয়ে উত্তরপত্রের সংশ্লিষ্ট বৃত্ত ভরাট করতে হবে। সঠিক উত্তর ও প্রয়োজনীয় তথ্যের ঘর ভরাট ছাড়া উত্তরপত্রে কোনো রকম দাগ দেওয়া যাবে না। এটাকে ভাঁজ করা যাবে না, মোচড়ানো যাবে না, কোণা ভাঙা যাবে না এবং ছেঁড়া বা অন্য কোনোভাবে বিকৃত করা যাবে না। ঘষামাজা বা কলমের দাগ লেপটানোও যাবে না। কোনো রকম বিকৃতি ফরমটিকে মূল্যায়নের অযোগ্য করে তুলবে। উত্তরপত্রটি যত্নসহকারে ব্যবহার করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, বৃত্তটির অভ্যন্তরের সম্পূর্ণ অংশটি যাতে ঘন কালো হয়ে ভরাট হয়।

নেগেটিভ মার্কিং

প্রতিটি শুদ্ধ উত্তরের জন্য পাওয়া যাবে এক নম্বর। আর প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য কাটা যাবে ০.৫০ নম্বর। ভালোভাবে জানা আছে এমন প্রশ্নের উত্তর বেছে বেছে উত্তর করাটাই হবে সঠিক সিদ্ধান্ত। ধরা যাক, আপনি ৬৫টির সঠিক উত্তর করলেন, ভুল হলো ৩০টি। এ ক্ষেত্রে ১৫ নম্বর কেটে আপনার প্রাপ্ত নম্বর দাঁড়াবে ৫০। আর যদি আন্দাজে বৃত্ত ভরাটের ঝুঁকিটা না নিতেন, তাহলে আপনার প্রাপ্ত নম্বর হতো ৬৫। তাই প্রশ্ন ছেড়ে আসাটা আপাতদৃষ্টিতে বোকামি মনে হলেও সেটাই হতে পারে পরীক্ষায় টিকে থাকার একটি কৌশল।

উত্তর করার আগে পুরো প্রশ্নটি পড়ে নেওয়াটাও কিন্তু জরুরি। দেখা গেল, কোনো প্রশ্নের সঠিক উত্তর হবে 'ওপরের সবগুলো'। আপনি প্রথম অপশনটি পড়েই সেটি সঠিক মনে করে বৃত্ত ভরাট করে ফেললেন। আপনার অজান্তেই কিন্তু ভুল হয়ে গেল।

সাধারণ অথচ গুরুত্বপূর্ণ

প্রশ্ন সহজ হলে বেশি প্রশ্নের উত্তর করা যেতে পারে, প্রশ্ন কঠিন হলে বেশি উত্তর না করাই ভালো। বিগত তিনটি বিসিএসের অভিজ্ঞতা তা-ই বলে। ৭০-৭৫টি প্রশ্নের উত্তর জানা থাকলে মোটামুটি নিশ্চিন্ত হওয়া যায়।

কোনো প্রশ্নের উত্তর নিশ্চিত জানা থাকলে সময় নষ্ট না করে বৃত্ত ভরাট করে ফেলুন। কিছু প্রশ্ন ভেবে উত্তর করতে হয়, তাই সময় বেশি লাগে। সহজ প্রশ্নগুলোর বেলায় সেই সময়টি আপনাকে বাঁচাতে হবে। কোনো প্রশ্নের উত্তর মনে না এলে সময় নষ্ট না করে পরের প্রশ্নে চলে যান। আর একটি বিষয়, কোনো প্রশ্নের দুটি ভুল উত্তর শনাক্ত করতে পারলেও সঠিক উত্তর দেওয়ার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ বা তারও বেশি হতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, ভুল উত্তরের জন্য আধা নম্বর কাটা যাবে। তাই বেশি অনুমাননিভর না হয়ে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে উত্তর করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

আন্দাজে উত্তর করা যাবে না

যে বিষয় সহজ মনে হয়, সেটি সবার আগে উত্তর করতে হবে। প্রথমে জানা প্রশ্নগুলোর উত্তর করতে হবে। কঠিন কোনো প্রশ্ন নিয়ে সময় নষ্ট না করে পরের প্রশ্নে চলে যেতে হবে। আন্দাজে কোনো প্রশ্নের উত্তর করাটা হবে বোকামি। তবে ৭০টি প্রশ্নের উত্তর নিশ্চিত জানা থাকলে ধারণার ওপর ভিত্তি করে বড়জোর আরো ১০টি উত্তর করা যেতে পারে, কিন্তু কোনোক্রমেই ২০টি নয়।

গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতাকম সময়ে সমাধান করার কৌশল আয়ত্ত করতে হবে

গণিতে যারা দুর্বল, এক ঘণ্টায় তাদের জন্য অন্য বিষয়গুলো কভার করে গণিতের সবকটি প্রশ্নের উত্তর করা কঠিনই বটে। আর গণিত কমন পড়ার কোনো বিষয় নয়। তাই কম সময়ে গণিতের সমাধান করার কৌশল আয়ত্ত করতে হবে। চর্চাটা করতে হবে বেশি বেশি। প্রিলিমিনারির নির্দিষ্ট কোনো সিলেবাস নেই। তবে পাটীগণিত থেকে প্রশ্ন আসে বেশি। অনুপাত, সমানুপাত, শতকরা, লাভক্ষতি, সুদকষা, ঐকিক নিয়ম, কাজ ও সময়, ল সা গু, গ সা গু, গড় ও সরল থেকে প্রশ্ন থাকে। বীজগণিতের উত্পাদক থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। সূত্রগুলো জানা থাকলে বীজগণিতের উত্তর করা সহজ হয়। বৃত্ত, ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ-জ্যামিতি থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। মানসিক দক্ষতা থেকেও ২৮ ও ২৯তম বিসিএসে প্রশ্ন এসেছে। তাই এ বিষয়েও প্রস্তুতি থাকা ভালো।

Comments

Popular posts from this blog

মনীষীদের বাণী- উক্তি

পেপ্যাল ভেরীফাই হয়নি তাই বলে কি ডোমেইন-হোস্টিং কেনা বন্ধ থাকবে? জানুন আনভেরীফায়েড পেপ্যাল দিয়ে ডোমেইন ও হোস্টিং কেনা যায় কোথা থেকে

বিসিএস পছন্দর ক্ষেত্রে প্রথম প্রশাসন কেন? দেখুন কোন ক্যাডারের পদোন্নতি কেমনভাবে হয় বা কোথায় থেকে কোথায় পোস্টিং