শান্তি’ প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ!
মুক্তার হোসেন
আল কায়েদার ওপর আক্রমণ চালানোর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সে সময়ের প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ বলেছিলেন, ‘ঈশ্বর আমাকে আদেশ দিয়েছেন আল কায়েদার ওপর আক্রমণ চালাতে। আমি ঈশ্বরের আদেশ পালন করেছি; এরপর তিনি আদেশ দিয়েছেন সাদ্দামকে আঘাত করতে, আমি তাই করেছি।’ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সিরিয়ায় হামলা চালানোর বিষয়ে ঈশ্বরের আদেশ পেয়েছেন কি না জানা না গেলেও সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের উদ্দেশে উচ্চারিত তার বক্তব্যে জানা গেছে, ‘একজন স্বৈরাচারী নিষ্ঠুর শাসকের বেপরোয়া রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের জবাবদিহিতা চাওয়া হবে। কোন ধরনের ঘৃণ্য অস্ত্র এ পৃথিবীতে ব্যবহার করতে দেয়া হবে না, এটাই এ গ্রহের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার।’ অসাধারণ মানব দরদী অঙ্গীকার নিঃসন্দেহে। সারা পৃথিবীর সামরিক ব্যয়ের শতকরা ষাট ভাগেরও বেশি (২০০৭ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী) নিয়ন্ত্রণকারী এবং বিশ্ব পুঁজিবাদের কেন্দ্র হিসেবে নিজের দাপট অক্ষুণœœ রাখতে যে দেশ অস্ত্র-অর্থনীতির চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নিয়েছে পৃথিবী নামের গ্রহ রক্ষার জন্য সেদেশের প্রেসিডেন্টের মুখে এমন অঙ্গীকারই মানায় বটে। বিশেষত তারা যখন স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী বিরতির পর পৃথিবীতে ‘শা’িু প্রতিষ্ঠার জন্য ঈশ্বরের কাছ থেকে যুদ্ধ ঘোষণার আদেশ পান। প্রথম আদেশ পেয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ম্যাকিনলিÑ ১৮৯৯ সালে স্পেনের উপনিবেশ ফিলিপিন্স দখলের সময়। নবীন যুক্তরাষ্ট্রের তখন পৃথিবীময় ক্ষমতা বিস্তারের পালা। ‘ঈশ্বরের আদেশের’ কাছে নিজের অপারগতার ব্যাখ্যা দিয়ে সেসময় গুরুগম্ভীর এক ভাষণ দিয়েছিলেন তিনি। বুশ-ওবামারা তাঁর কথার প্রতিধ্বনি করেছেন মাত্র। ঈশ্বরের কৃপায় সেই যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যুক্তরাষ্ট্র মাঠে নেমেছিল ‘দূর’ু গতিতে শতাব্দী পেরিয়ে তা এখন সহস্রাব্দের দ্বিতীয় দশক পাড়ি দিচ্ছে। এবার সিরিয়ার ‘অশান্তি’ দূর করার পালা।
প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী গোয়েন্দা বাহিনী ফিল্ড জরিপ করে স্বদেশের সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সৌজন্যে সে সম্পর্কে জানতে পারি, ‘সিরিয়ার রাজধানী দাস্কের উপকণ্ঠে একুশ আগস্ট রাসায়নিক’ অস্ত্র হামলায় বাশার আল আসাদের সরকারি বাহিনীই ১ হাজার ৪২৯ জনকে হত্যা করেছে যাদের মধ্যে ৪২৬ জনই শিশু। তিনি একে ‘অভাবনীয় রকম ভয়াবহ’ এবং মানবতার বিরুদ্ধ বলে মন্তব্য করে বলেন, ‘এ পরিস্থিতিতে চুপ করে বসে থাকা যায় না। যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে প্রকৃত সত্য জেনে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা রিপোর্ট থেকে রাসায়নিক হামলায় নিহতের এ পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে এবং জাতিসংঘের তদন্ত দল এর চেয়ে নতুন আর কোন তথ্য দিতে পারবে না।’ তা তো পারবেই না। যুক্তরাষ্ট্র সরকার যে তথ্য চাইবে তার বাইরে অন্য কোন তথ্য দেয়ার সাধ্য জাতিসংঘ কেন চল্লিশ বিলিয়ন বা চার হাজার কোটি ডলারে পোষা স্বয়ং যুক্তরাষ্ট্রের পনেরো বিশটি গোয়েন্দা সংস্থারও নেই। জাতিসংঘ তো তাদের পাপেট শো এর অন্যতম ওয়ার্কশপ। এরা কি তথ্য দিল না দিল তা থোরাই কেয়ার করে যুক্তরাষ্ট্র।
ইরাকে হামলার আগে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বাঘা বাঘা গোয়েন্দা সংস্থা সেখানে ‘ভয়ঙ্কর মানববিধ্বংসী’ অস্ত্রের বিরাট মজুদের সন্ধান পেয়েছিল। যার ভয়াবহতার ঢাকঢোল পিটিয়ে সেখানে আক্রমণের বৈধতা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল এবং ইরাকের সাধারণ মানুষকে এক দশক ধরে নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে দিনাতিপাত করতে হয়েছিল। পৃথিবীর শক্তিশালী এদেশ দুটোর গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কেন মানববিধ্বংসী অস্ত্র মজুদের এমন কল্পকাহিনী শুনিয়েছিল সে প্রশ্ন কেউ করেনি, করার প্রয়োজন হয়নি। কারণ বুদ্ধিমানরা জানেন গোয়েন্দা তদন্তে তারা সে তথ্যই পায় যা তারা পেতে চায়। যা চায় না তা চোখের সামনে জ্বল জ্বল করলেও পায় না। কেরি জানিয়েছেন, তাদের গোয়েন্দা সংস্থা সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলার পেছনে আসাদ বাহিনীর জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে। সুতরাং পৃথিবীতে ‘শান্তি’ প্রতিষ্ঠার জন্য এর অধিবাসীরা অচিরেই আরেকটি যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করতে যাচ্ছে।
যে আল-কায়েদার বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যাদের ধ্বংস করার জন্য ‘ঈশ্বরের কাছ থেকে আদেশ’ পান নিজেদের স্বার্থে তাদের পক্ষ নিয়ে লড়তেও যে মার্কিনীদের বাঁধে না তারই প্রমাণ মিলতে যাচ্ছে আসন্ন সিরিয়া যুদ্ধে। যাদেরকে বিশ্ব সন্ত্রাসবাদের এক নম্বর দাগি আসামি বলে ২০০১-এর এগারো সেপ্টেম্বরের পর থেকে চেঁচিয়ে গলা ফাটাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়া যুদ্ধে তারাই হবে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র। ব্রিটিশ সাংবাদিক রবার্ট তার সাম্প্রতিক এক কলামে বলেছেন,‘ যারা নাইন ইলেভেনে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেছিল। বারো বছর আগে আক্রান্ত সে দেশ এখন নিজেদের হত্যাকারীদের সঙ্গে পাশাপাশি লড়ে যাবে। .... আমেরিকানরা ড্রোন হামলা চালিয়ে ইয়েমেন ও পাকিস্তানে আল কায়েদা সদস্যদের হত্যা করেছে। সেই তারাই সিরিয়ায় আল কায়েদার শত্রুদের ওপর আঘাত করে আল কায়েদাকে সুবিধা করে দেবে এবং যে কারও পক্ষে নিশ্চিত করে বলা সম্ভব যে, আমেরিকানরা সিরিয়ায় একমাত্র আল কায়েদার ওপরই হামলা চালানো থেকে বিরত থাকবে।’ বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। এই আল কায়েদা প্রধানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিতে প্রেসিডেন্ট বুশ বিশ্বের সব রাষ্ট্রের সম্মিলিত শক্তিকে আহ্বান করেছিলেন। এবং হুমকি দিয়ে বলে ছিলেন যারা তার আহ্বানে সাড়া দেবে না তারাও সন্ত্রাসী। কোন ধরনের প্রমাণ ছাড়া ওসামা বিন লাদেনকে প্রধান আসামি চিহ্নিত করা এবং তাকে আশ্রয় দেয়া দেশ আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা, সব হয়েছিল জাতিসংঘ সনদ উপেক্ষা করে। বিশ্বের অনেক দেশ ‘সন্ত্রাসবাদের’ বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেই যুদ্ধকে সমর্থন করেছিল। একজন মানুষকে খোঁজার অজুহাতে তছনছ করা হয়েছে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। যার নাম তারা দিয়েছিল ‘অপারেশন ইনফিনিট জাস্টিস’ বা ‘চূড়ান্ত ইনসাফ’। নিজেদের নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ায় অপপ্রচারের মাধ্যমে তারা বিশ্ববাসীর মনে আফগানিস্তান আক্রমণ সম্পর্কে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার ইমেজ তৈরি করেছে। তবে আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান ও তালেবান উৎখাতের আড়ালে আসল উদ্দেশ্য এখন সবার কাছে পরিষ্কার হয়েছে নিশ্চয়। আসল উদ্দেশ্য ছিল আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে তেলের একটি পাইপলাইন তৈরি ও বিতরণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে মধ্য এশিয়ার বিপুল খনিজ ও প্রাকৃতীক সম্পদের দিকে লোভী চোখ ছিল মার্কিন বহুজাতিক তেল গ্যাস কোম্পানিগুলোর। এই সম্পদ নিজেদের দখলে নেয়ার জন্য কত নাটকই সাজিয়েছিল তারা! সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর ওই অঞ্চল থেকে রাশিয়া, চীন, জাপান ও ইউরোপের দেশগুলোকে উচ্ছেদ করে যুক্তরাষ্ট্র একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে। কারণ ওই অঞ্চলের মাটির নিচে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় তেল ও গ্যাসের মজুদ রয়েছে। সোভিয়েত আমলে ওই এলাকায় একটি মাত্র পাইপলাইন ছিল যা গিয়েছিল রাশিয়ার মধ্য দিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের তেল কোম্পানিগুলোর উদ্দেশ্য ছিল রাশিয়া, চীন এ ইরানকে বাদ দিয়ে যে পাইপলাইন ও বিতরণ ব্যবস্থা তারা প্রতিষ্ঠা করবে তার একক কর্তৃক থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। নিজেদের স্বভাব অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র সব সময় আসল উদ্দেশ্য আড়াল রেখে ভিন্ন ইস্যু তৈরি করে। আর নিজেদের নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ায় ওই বানানো ইস্যুর সাতকাহন ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করে বিশ্বময় হৈচৈ ফেলে দেয়। সিরিয়ার বেলায়ও তেমন না হওয়ার কারণ নেই। তবে সিরিয়ায় আক্রমণের আগে যুক্তরাষ্ট্রকে সম্ভবত একটু হলেও ভাবতে হচ্ছে। কারণ ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাজ্য নিজ দেশের জনগণের কাছে যুদ্ধের পক্ষে সমর্থন না পেয়ে লেজগুটিয়ে নিয়েছে। রাশিয়া ও চীন পাল্টা হুমকি দিয়েছে। সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলার জন্য প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের দোষ চাপানোকে চ্যালেঞ্জ করে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন অনুমাননির্ভর মন্তব্য না করে অকাট্য প্রমাণ দিতে বলেছেন।
তিনি মনে করেন, সিরিয়ার সরকার নির্বোধের মতো এমন কোন কাজ করবে না যাতে তার শক্ররা হামলার অজুহাত খুঁজে পায়। পুতিন পরিষ্কার বলেছেন, সিরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর কোন প্রমাণ থাকলে তা জাতিসংঘে উপস্থাপন করা উচিত। যদি তা না করা হয় তাহলে বুঝতে হবে তাদের কাছে আসলে কোন প্রমাণ নেই। শনিবার ভেজা মাছটি উল্টে খেতে জানে না গোছের মুখোভঙ্গি করে সাংবাদিকদের ওবামা জানালেন, সিরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক হস্তক্ষেপ বিষয়ে তিনি কংগ্রেসের সমর্থন চান তবে আইন অনুযায়ী কমান্ডার ইনচিফ হিসেবে কংগ্রেসের সমর্থন ছাড়াই তিনি হামলার নির্দেশ দিতে পারেন। কংগ্রেসে আসলেই কি বিষয়টি ওঠাবেন ওবামা? ডাহা মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে ইরাকের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের হামলার বিষয়টি বাইরের দুনিয়াসহ সেদেশের নাগরিকদের কাছে এখন এত বেশি পরিষ্কার যে, সিরিয়ার বিরুদ্ধে হামলার প্রস্তাবে ওবামার অভিজ্ঞতা ক্যামেরনের মতো হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। যুদ্ধবাজ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও তার কর্পোরেট বন্ধুরা তাহলে নীতিগতভাবে আটকে যাবেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রেসিডেন্টের এমন কাপুরুষোচিত ভূমিকা কখনও দেখা যায়নি। সুতরাং মুখে যাই বলুন ওবামা কংগ্রেসে যাবেন না। বরং যেমনটি তিনি বলেছেন, ‘এই হামলা আগামী কাল, আগামী সপ্তাহে কিংবা ভবিষ্যতে যে কোন সময় চালানো হতে পারে। দামেস্কে যা ঘটেছে তা দেখে আমরা অন্ধের মতো বসে থাকতে পারি না’। এবং অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জানি চক্ষুষ্মান যুক্তরাষ্ট্র এরপর যা করবে তাতে তার সরকার লাভবান ও অস্ত্র ব্যবসায়ী কর্পোরেট বন্ধুরা অস্ত্র ও যুদ্ধপণ্য বিক্রির দুর্দান্ত সুযোগ পেয়ে আনন্দে লাফালাফি করলেও সিরিয়ার সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন থেকে বিপন্নতর হবে, এমনিতেই গৃহযুদ্ধের কারণে তারা যথেষ্ট দুর্দশার মধ্যে আছেন।
যুদ্ধবাজরা যুদ্ধ করে প্রাণ যায় নিরীহ সাধারণ মানুষের। সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলায় ৪২৬ জন শিশুর প্রাণহানীকে জন কেরি ‘অভাবনীয় রকম ভয়াবহ’ বলেছেন। নিঃসন্দেহে এ ঘটনা দুঃখজনক। তবে এর চেয়ে অনেক ভয়াবহ ঘটনা যুক্তরাষ্ট্র ঘটিয়েছে। ইরাক যুেদ্ধ পাঁচ লাখ ইরাকী শিশু মারা গিয়েছিল। সে সময়ের মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেডিলিন অলব্রাইটকে একটি টিভি চ্যালের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়েছিল মার্কিন অর্থনৈতিক অবরোধের জন্য এই যে এত শিশুর প্রাণ গেল এতে তার প্রতিক্রিয়া কি? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, এটা বেশ কঠোর সিদ্ধান্ত তবে যে উদ্দেশ্য পূরণের জন্য এটা করা হচ্ছে তার বিনিময় হিসেবে এটা ঠিক আছে।
এই হচ্ছে আক্রান্ত দেশ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব। সুতরাং ৪২৬ শিশু বা ১ হাজার ৪২৯ জন মানুষ মারা যাওয়ার ‘অভাবনীয় রকম ভয়াবহতা’ বা ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’-এর শাস্তি দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ বহর সিরিয়ায় যাচ্ছে না সে কথা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়। তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে সিরিয়ার ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক অবস্থান।
মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়ার তেলের মজুদের ওপর আধিপত্য ও দখলদারি বাজায় রাখাসহ তেলের মজুদের পাইপলাইন নিজেদের দখলে রাখার যুদ্ধ। সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে ভিন্ন র্স্ট্যাটেজি নিয়ে এগোচ্ছিল। বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে জনগণের বিক্ষোভে ঘি ঢালতে প্রথমে ভাড়াটে সৈন্য পাঠিয়েছিল। সেখানে আগে থেকে সক্রিয় আল কায়েদাকে সমর্থন দিয়েছে। এতকিছুর পরও আসাদকে উৎখাত করা সম্ভব হয়নি। এত সমর্থন সহযোগিতার পরও যখন বিদ্রোহীরা ক্রমশ পরাজয়ের দিকে যাচ্ছিল তখন মুখোশ খুলে স্বমূর্তিতে আবির্ভূত হলো যুক্তরাষ্ট্র। দামেস্কের উপশহরে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে কিছু প্রাণহানি করে সরাসরি যুদ্ধের ইস্যু তৈরি করল। এখন সিরিয়ায় মিসাইল হামলার প্রস্তুতি চলছে এ অজুহাতে যে, সেখানে রাসায়নিক অস্ত্রের মজুদ আছে। সেই ইরাকের গল্পেরই পুনরাবৃত্তি যেন।
প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী গোয়েন্দা বাহিনী ফিল্ড জরিপ করে স্বদেশের সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সৌজন্যে সে সম্পর্কে জানতে পারি, ‘সিরিয়ার রাজধানী দাস্কের উপকণ্ঠে একুশ আগস্ট রাসায়নিক’ অস্ত্র হামলায় বাশার আল আসাদের সরকারি বাহিনীই ১ হাজার ৪২৯ জনকে হত্যা করেছে যাদের মধ্যে ৪২৬ জনই শিশু। তিনি একে ‘অভাবনীয় রকম ভয়াবহ’ এবং মানবতার বিরুদ্ধ বলে মন্তব্য করে বলেন, ‘এ পরিস্থিতিতে চুপ করে বসে থাকা যায় না। যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে প্রকৃত সত্য জেনে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা রিপোর্ট থেকে রাসায়নিক হামলায় নিহতের এ পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে এবং জাতিসংঘের তদন্ত দল এর চেয়ে নতুন আর কোন তথ্য দিতে পারবে না।’ তা তো পারবেই না। যুক্তরাষ্ট্র সরকার যে তথ্য চাইবে তার বাইরে অন্য কোন তথ্য দেয়ার সাধ্য জাতিসংঘ কেন চল্লিশ বিলিয়ন বা চার হাজার কোটি ডলারে পোষা স্বয়ং যুক্তরাষ্ট্রের পনেরো বিশটি গোয়েন্দা সংস্থারও নেই। জাতিসংঘ তো তাদের পাপেট শো এর অন্যতম ওয়ার্কশপ। এরা কি তথ্য দিল না দিল তা থোরাই কেয়ার করে যুক্তরাষ্ট্র।
ইরাকে হামলার আগে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বাঘা বাঘা গোয়েন্দা সংস্থা সেখানে ‘ভয়ঙ্কর মানববিধ্বংসী’ অস্ত্রের বিরাট মজুদের সন্ধান পেয়েছিল। যার ভয়াবহতার ঢাকঢোল পিটিয়ে সেখানে আক্রমণের বৈধতা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল এবং ইরাকের সাধারণ মানুষকে এক দশক ধরে নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে দিনাতিপাত করতে হয়েছিল। পৃথিবীর শক্তিশালী এদেশ দুটোর গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কেন মানববিধ্বংসী অস্ত্র মজুদের এমন কল্পকাহিনী শুনিয়েছিল সে প্রশ্ন কেউ করেনি, করার প্রয়োজন হয়নি। কারণ বুদ্ধিমানরা জানেন গোয়েন্দা তদন্তে তারা সে তথ্যই পায় যা তারা পেতে চায়। যা চায় না তা চোখের সামনে জ্বল জ্বল করলেও পায় না। কেরি জানিয়েছেন, তাদের গোয়েন্দা সংস্থা সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলার পেছনে আসাদ বাহিনীর জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে। সুতরাং পৃথিবীতে ‘শান্তি’ প্রতিষ্ঠার জন্য এর অধিবাসীরা অচিরেই আরেকটি যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করতে যাচ্ছে।
যে আল-কায়েদার বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যাদের ধ্বংস করার জন্য ‘ঈশ্বরের কাছ থেকে আদেশ’ পান নিজেদের স্বার্থে তাদের পক্ষ নিয়ে লড়তেও যে মার্কিনীদের বাঁধে না তারই প্রমাণ মিলতে যাচ্ছে আসন্ন সিরিয়া যুদ্ধে। যাদেরকে বিশ্ব সন্ত্রাসবাদের এক নম্বর দাগি আসামি বলে ২০০১-এর এগারো সেপ্টেম্বরের পর থেকে চেঁচিয়ে গলা ফাটাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়া যুদ্ধে তারাই হবে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র। ব্রিটিশ সাংবাদিক রবার্ট তার সাম্প্রতিক এক কলামে বলেছেন,‘ যারা নাইন ইলেভেনে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেছিল। বারো বছর আগে আক্রান্ত সে দেশ এখন নিজেদের হত্যাকারীদের সঙ্গে পাশাপাশি লড়ে যাবে। .... আমেরিকানরা ড্রোন হামলা চালিয়ে ইয়েমেন ও পাকিস্তানে আল কায়েদা সদস্যদের হত্যা করেছে। সেই তারাই সিরিয়ায় আল কায়েদার শত্রুদের ওপর আঘাত করে আল কায়েদাকে সুবিধা করে দেবে এবং যে কারও পক্ষে নিশ্চিত করে বলা সম্ভব যে, আমেরিকানরা সিরিয়ায় একমাত্র আল কায়েদার ওপরই হামলা চালানো থেকে বিরত থাকবে।’ বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। এই আল কায়েদা প্রধানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিতে প্রেসিডেন্ট বুশ বিশ্বের সব রাষ্ট্রের সম্মিলিত শক্তিকে আহ্বান করেছিলেন। এবং হুমকি দিয়ে বলে ছিলেন যারা তার আহ্বানে সাড়া দেবে না তারাও সন্ত্রাসী। কোন ধরনের প্রমাণ ছাড়া ওসামা বিন লাদেনকে প্রধান আসামি চিহ্নিত করা এবং তাকে আশ্রয় দেয়া দেশ আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা, সব হয়েছিল জাতিসংঘ সনদ উপেক্ষা করে। বিশ্বের অনেক দেশ ‘সন্ত্রাসবাদের’ বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেই যুদ্ধকে সমর্থন করেছিল। একজন মানুষকে খোঁজার অজুহাতে তছনছ করা হয়েছে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। যার নাম তারা দিয়েছিল ‘অপারেশন ইনফিনিট জাস্টিস’ বা ‘চূড়ান্ত ইনসাফ’। নিজেদের নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ায় অপপ্রচারের মাধ্যমে তারা বিশ্ববাসীর মনে আফগানিস্তান আক্রমণ সম্পর্কে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার ইমেজ তৈরি করেছে। তবে আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান ও তালেবান উৎখাতের আড়ালে আসল উদ্দেশ্য এখন সবার কাছে পরিষ্কার হয়েছে নিশ্চয়। আসল উদ্দেশ্য ছিল আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে তেলের একটি পাইপলাইন তৈরি ও বিতরণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে মধ্য এশিয়ার বিপুল খনিজ ও প্রাকৃতীক সম্পদের দিকে লোভী চোখ ছিল মার্কিন বহুজাতিক তেল গ্যাস কোম্পানিগুলোর। এই সম্পদ নিজেদের দখলে নেয়ার জন্য কত নাটকই সাজিয়েছিল তারা! সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর ওই অঞ্চল থেকে রাশিয়া, চীন, জাপান ও ইউরোপের দেশগুলোকে উচ্ছেদ করে যুক্তরাষ্ট্র একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে। কারণ ওই অঞ্চলের মাটির নিচে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় তেল ও গ্যাসের মজুদ রয়েছে। সোভিয়েত আমলে ওই এলাকায় একটি মাত্র পাইপলাইন ছিল যা গিয়েছিল রাশিয়ার মধ্য দিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের তেল কোম্পানিগুলোর উদ্দেশ্য ছিল রাশিয়া, চীন এ ইরানকে বাদ দিয়ে যে পাইপলাইন ও বিতরণ ব্যবস্থা তারা প্রতিষ্ঠা করবে তার একক কর্তৃক থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। নিজেদের স্বভাব অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র সব সময় আসল উদ্দেশ্য আড়াল রেখে ভিন্ন ইস্যু তৈরি করে। আর নিজেদের নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ায় ওই বানানো ইস্যুর সাতকাহন ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করে বিশ্বময় হৈচৈ ফেলে দেয়। সিরিয়ার বেলায়ও তেমন না হওয়ার কারণ নেই। তবে সিরিয়ায় আক্রমণের আগে যুক্তরাষ্ট্রকে সম্ভবত একটু হলেও ভাবতে হচ্ছে। কারণ ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাজ্য নিজ দেশের জনগণের কাছে যুদ্ধের পক্ষে সমর্থন না পেয়ে লেজগুটিয়ে নিয়েছে। রাশিয়া ও চীন পাল্টা হুমকি দিয়েছে। সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলার জন্য প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের দোষ চাপানোকে চ্যালেঞ্জ করে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন অনুমাননির্ভর মন্তব্য না করে অকাট্য প্রমাণ দিতে বলেছেন।
তিনি মনে করেন, সিরিয়ার সরকার নির্বোধের মতো এমন কোন কাজ করবে না যাতে তার শক্ররা হামলার অজুহাত খুঁজে পায়। পুতিন পরিষ্কার বলেছেন, সিরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর কোন প্রমাণ থাকলে তা জাতিসংঘে উপস্থাপন করা উচিত। যদি তা না করা হয় তাহলে বুঝতে হবে তাদের কাছে আসলে কোন প্রমাণ নেই। শনিবার ভেজা মাছটি উল্টে খেতে জানে না গোছের মুখোভঙ্গি করে সাংবাদিকদের ওবামা জানালেন, সিরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক হস্তক্ষেপ বিষয়ে তিনি কংগ্রেসের সমর্থন চান তবে আইন অনুযায়ী কমান্ডার ইনচিফ হিসেবে কংগ্রেসের সমর্থন ছাড়াই তিনি হামলার নির্দেশ দিতে পারেন। কংগ্রেসে আসলেই কি বিষয়টি ওঠাবেন ওবামা? ডাহা মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে ইরাকের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের হামলার বিষয়টি বাইরের দুনিয়াসহ সেদেশের নাগরিকদের কাছে এখন এত বেশি পরিষ্কার যে, সিরিয়ার বিরুদ্ধে হামলার প্রস্তাবে ওবামার অভিজ্ঞতা ক্যামেরনের মতো হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। যুদ্ধবাজ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও তার কর্পোরেট বন্ধুরা তাহলে নীতিগতভাবে আটকে যাবেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রেসিডেন্টের এমন কাপুরুষোচিত ভূমিকা কখনও দেখা যায়নি। সুতরাং মুখে যাই বলুন ওবামা কংগ্রেসে যাবেন না। বরং যেমনটি তিনি বলেছেন, ‘এই হামলা আগামী কাল, আগামী সপ্তাহে কিংবা ভবিষ্যতে যে কোন সময় চালানো হতে পারে। দামেস্কে যা ঘটেছে তা দেখে আমরা অন্ধের মতো বসে থাকতে পারি না’। এবং অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জানি চক্ষুষ্মান যুক্তরাষ্ট্র এরপর যা করবে তাতে তার সরকার লাভবান ও অস্ত্র ব্যবসায়ী কর্পোরেট বন্ধুরা অস্ত্র ও যুদ্ধপণ্য বিক্রির দুর্দান্ত সুযোগ পেয়ে আনন্দে লাফালাফি করলেও সিরিয়ার সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন থেকে বিপন্নতর হবে, এমনিতেই গৃহযুদ্ধের কারণে তারা যথেষ্ট দুর্দশার মধ্যে আছেন।
যুদ্ধবাজরা যুদ্ধ করে প্রাণ যায় নিরীহ সাধারণ মানুষের। সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলায় ৪২৬ জন শিশুর প্রাণহানীকে জন কেরি ‘অভাবনীয় রকম ভয়াবহ’ বলেছেন। নিঃসন্দেহে এ ঘটনা দুঃখজনক। তবে এর চেয়ে অনেক ভয়াবহ ঘটনা যুক্তরাষ্ট্র ঘটিয়েছে। ইরাক যুেদ্ধ পাঁচ লাখ ইরাকী শিশু মারা গিয়েছিল। সে সময়ের মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেডিলিন অলব্রাইটকে একটি টিভি চ্যালের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়েছিল মার্কিন অর্থনৈতিক অবরোধের জন্য এই যে এত শিশুর প্রাণ গেল এতে তার প্রতিক্রিয়া কি? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, এটা বেশ কঠোর সিদ্ধান্ত তবে যে উদ্দেশ্য পূরণের জন্য এটা করা হচ্ছে তার বিনিময় হিসেবে এটা ঠিক আছে।
এই হচ্ছে আক্রান্ত দেশ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব। সুতরাং ৪২৬ শিশু বা ১ হাজার ৪২৯ জন মানুষ মারা যাওয়ার ‘অভাবনীয় রকম ভয়াবহতা’ বা ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’-এর শাস্তি দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ বহর সিরিয়ায় যাচ্ছে না সে কথা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়। তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে সিরিয়ার ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক অবস্থান।
মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়ার তেলের মজুদের ওপর আধিপত্য ও দখলদারি বাজায় রাখাসহ তেলের মজুদের পাইপলাইন নিজেদের দখলে রাখার যুদ্ধ। সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে ভিন্ন র্স্ট্যাটেজি নিয়ে এগোচ্ছিল। বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে জনগণের বিক্ষোভে ঘি ঢালতে প্রথমে ভাড়াটে সৈন্য পাঠিয়েছিল। সেখানে আগে থেকে সক্রিয় আল কায়েদাকে সমর্থন দিয়েছে। এতকিছুর পরও আসাদকে উৎখাত করা সম্ভব হয়নি। এত সমর্থন সহযোগিতার পরও যখন বিদ্রোহীরা ক্রমশ পরাজয়ের দিকে যাচ্ছিল তখন মুখোশ খুলে স্বমূর্তিতে আবির্ভূত হলো যুক্তরাষ্ট্র। দামেস্কের উপশহরে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে কিছু প্রাণহানি করে সরাসরি যুদ্ধের ইস্যু তৈরি করল। এখন সিরিয়ায় মিসাইল হামলার প্রস্তুতি চলছে এ অজুহাতে যে, সেখানে রাসায়নিক অস্ত্রের মজুদ আছে। সেই ইরাকের গল্পেরই পুনরাবৃত্তি যেন।
Comments
Post a Comment