সাত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আইনজীবী সনদ না দেওয়ার সুপারিশ
বার কাউন্সিল লিগ্যাল এডুকেশন কমিটির সভা
সাত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আইনজীবী সনদ না দেওয়ার সুপারিশ
সাতটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্তিকরণ পরীক্ষায় অংশ নিতে রেজিস্ট্রেশন করতে না দেওয়ার সুপারিশ করেছে বার কাউন্সিলের লিগ্যাল এডুকেশন কমিটি। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার পর এই সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অ্যাডভোকেটশিপ সনদ পাবে না।
সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় হল- দারুল ইহসান, অতীশ দীপঙ্কর, প্রাইম, ইবাইস, নর্দান, আমেরিকা বাংলাদেশ ও বিজিসি ট্রাস্ট।
আগামী ৭ সেপ্টেম্বর বার কাউন্সিলের মূল কমিটির সভা হওয়ার কথা রয়েছে। এ সভায় লিগ্যাল এডুকেশন কমিটির সুপারিশ আলোচনা সাপেক্ষে গ্রহণ করে তা আদেশ আকারে জানানো হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে লিগ্যাল এডুকেশন কমিটির চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা খান দ্য রিপোর্টকে বলেন, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সভায় নিয়মানুযায়ী আমরা কিছু সুপারিশ করেছি এবং বার কাউন্সিল কমিটি সেই মোতাবেক সিদ্ধান্ত নিয়ে সবাইকে জানিয়ে দিবে।
তিনি বলেন, ‘বার কাউন্সিলের বিজ্ঞপ্তি অনুসারে ৩৬টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শিক্ষার্থীদের নামের তালিকা, সেশন, রোলসহ জমা দিয়েছে। লিগ্যাল এডুকেশন কমিটির মিটিংয়ে সেগুলো যাচাই-বাছাই করে এই সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যে অসামঞ্জস্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া এদের মধ্যে মালিকানা দ্বন্দ্ব, আউটডোর ক্যাম্পাস নিয়ে মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। তাই এদের বাদ দিয়ে বাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আইনজীবী অন্তর্ভুক্তিকরণ পরীক্ষায় রেজিস্ট্রেশন করার অনুমতি দিতে আমরা সুপারিশ করেছি।’
লিগ্যাল এডুকেশন কমিটির সুপারিশ বার কাউন্সিলের মূল কমিটি বহাল রাখবে কি না- জানতে চাইলে গোলাম মোস্তফা বলেন, বার কাউন্সিলের আমি ও এ কমিটির সদস্যরা সবাই নির্বাচিত সদস্য। তা ছাড়া বড় বড় আইনজীবী ও শিক্ষাবিদদের মতামতের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নিয়ে সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং সিদ্ধান্ত হওয়ার পর বার কাউন্সিল এ সাত বিশ্ববিদ্যালয়কে আপাতত সনদ না দেওয়ার আদেশ দিবে।
যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উচ্চ আদালতের আদেশে মামলার স্থগিতাদেশ নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে তাদের ক্ষেত্রেও এ বিষয়টি বহাল থাকবে কি না- জানতে চাইলে গোলাম মোস্তফা জানান, বিচারাধীন মামলার নিষ্পত্তি হওয়ার পর অথবা তারা যদি নতুন করে আবারও আদালত থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে মর্মে আদেশ নিয়ে আসে, সেক্ষেত্রে বার কাউন্সিল তাদের বিষয়ে বিবেচনা করবে। তা ছাড়া আপাতত এ সাত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন স্থগিত রাখা হবে।
একইসঙ্গে পরবর্তী সময়ে যে সকল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগ খুলবে তাদের বার কাউন্সিল থেকে অনুমতি নিতে হবে মর্মেও সুপারিশ করা হয়েছে বলে লিগ্যাল এডুকেশন কমিটির চেয়ারম্যান জানান।
খুব দ্রুতই এ বিষয়টি আদেশ আকারে সবাইকে জানিয়ে পরবর্তী পরীক্ষার সময় নির্ধারণ করা হবে বলেও জানান গোলাম মোস্তফা।
তিনি জানান, এ সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সমস্যা রয়েছে তার সমাধান করার পর বার কাউন্সিল বিষয়টি বিবেচনা করবে।
‘বেশি শিক্ষার্থী আইনজীবী হলে বার কাউন্সিলের কোনো ক্ষতি নেই। কিন্তু সার্টিফিকেট কিনে, অবৈধভাবে কাউকে আমরা পরীক্ষায় অংশ নিতে দিতে পারি না’ যোগ করেন গোলাম মোস্তফা খান।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন দ্য রিপোর্টকে বলেন, কাউন্সিলের মূল কমিটির মিটিংয়ে লিগ্যাল এডুকেশন কমিটির সুপারিশ আলোচনা সাপেক্ষে গ্রহণ করা হবে এবং সে মোতাবেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ২৬ জুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবৈধ কার্যক্রম সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন এ সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠিয়েছে। এ ছাড়া অবৈধ ক্যাম্পাস বন্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও একাধিক চিঠি দিয়েছে। সংসদীয় কমিটির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মামলা সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- দারুল ইহসান, প্রাইম, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সাউদার্ন, নর্দান, পিপলস, বিজিসি ট্রাস্ট, ইবাইস, আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি, আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, কুইন্স ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চট্টগ্রাম (ইউএসটিসি), ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি)। এ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য জটিলতাও রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম নয়টি অবৈধ ক্যাম্পাস চালাচ্ছে। এক্ষেত্রে অবশ্য কেউ কেউ উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে।
এর আগে ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ২০১২, ২০১৩ ও ২০১৪ সালে আইন বিভাগে স্নাতকে ডিগ্রী অর্জনকারী সর্বমোট ১২ হাজার ৮৬৪ জন শিক্ষার্থীর নামের তালিকা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে দাখিল করেছে।
প্রসঙ্গত, আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্তির পরীক্ষায় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রেশন ফরম দেওয়া হচ্ছে না এ বছরের শুরু থেকে। এ কারণে এবারের নিম্ন আদালতের এনরোলমেন্ট পরীক্ষা প্রায় আট মাস পিছিয়ে যাচ্ছে। এ বছরের শেষ নাগাদ পরীক্ষা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
Comments
Post a Comment